চার্লস ব্যাবেজ
( Charles Babbage)
একজন যন্ত্র প্রকৌশলী, গণিতবিদ, আবিষ্কারক ও দার্শনিক। তাঁকে কম্পিউটারের জনক হিসাবে অভিহিত করা হয়।
তিনি ডিফারেন্স ইঞ্জিন ও অ্যানালাইটিকাল ইঞ্জিন নামের দুইটি যান্ত্রিক
কম্পিউটার তৈরি করেন। তাঁর তৈরি অ্যানালাইটিকাল ইঞ্জিন যান্ত্রিকভাবে
গাণিতিক অপারেশন সম্পাদন করতে পারত এবং এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আজকের
কম্পিউটারের ডিজাইনে এখনও গুরুত্বপূর্ণ। অর্থায়নের অভাবে ব্যাবেজ তাঁর
প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করতে পারেননি।জন্ম | ২৬ ডিসেম্বর ১৭৯১ লন্ডন | ||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মৃত্যু | ১৮ অক্টোবর ১৮৭১ (৭৯ বছর) মারলেবন,লন্ডন,ইংল্যান্ড | ||||||||||||||||||||||||||||||||||
কর্মক্ষেত্র | গণিত, প্রকৌশল, রাজনৈতিক অর্থনীতি, কম্পিউটার বিজ্ঞান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||
প্রতিষ্ঠান | ট্রিনিটি কলেজ, ক্যামব্রিজ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||
প্রাক্তন ছাত্র | পিটারহাউস, ক্যামব্রিজ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||
পরিচিতির কারণ | ডিফারেন্স ইঞ্জিন | ||||||||||||||||||||||||||||||||||
যাদের দ্বারা প্রভাবান্বিত | রবার্ট উডহাউস,গেসপার্ড মঞ্জি, জন হার্শেল | ||||||||||||||||||||||||||||||||||
যাদেরকে প্রভাবিত করেছেন | কার্ল মার্কস, জন স্টুয়ার্ট মিল, অ্যাডা লাভলেস | ||||||||||||||||||||||||||||||||||
স্বাক্ষর
কর্মজীবন
১৮২৮ সালে তিনি লুকাসিয়ান প্রফেসর
হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৮৩৯ সাল পর্যন্ত এ পদে আসীন ছিলেন।তিনি
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতে ভালবাসতেন না, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষাকে আরও সংহত দেখতে চেয়েছিলেন,বিশেষ করে গবেষণা ও বৃহত্তর পাঠ্যক্রম
আরও বেশি করে নজর দেওয়া।ছয় বছর ধরে রিচার্ড জোনসের সাথে তাঁর এই নিয়ে
বিতর্ক চলে। তিনি কখনও অধ্যাপনা করেনি।এই সময়ের তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ
করার চেষ্টা করেছিলেন।তিনি বেরা অফ ফিনসবারীর প্রার্থী হিসেবে দুবার সংসদে
দাঁড়িয়েছিলেন। ১৮৩২ সালে পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে তিনি তৃতীয় স্থান
পান।১৮৩৪ সালে তিনি চারজনের মধ্যে চতুর্থ স্থান অর্জন করেন।১৮৩৯ সালের শেষে
তিনি লুকাসিয়ান অধ্যাপক হিসাবে পদত্যাগ পাঠান, ভ্যাভেলের সাথে কেমব্রিজের
সংগ্রাম থেকেও দূরে চলে যান।গণিত ও
গুনতি এবং আন্তর্জাতিক পরিচিতিগুলির উপর তিনি আরও মনোযোগী হয়ে ওঠেন।
ডরসেট স্ট্রিট, মারলেবনে, তিনি ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেন এবং
থাকতেন;১৮ অক্টোবর ১৮৭১ সালে,৭৯ বছর বয়সে এখানেই চার্লস মারা যান।তাকে লন্ডনের কেন্সাল গ্রিন কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছিল।তিনি নাইটহুড এবং ব্যারনেটের খেতাব উভয়ই প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
চার্লস চার্লস ব্যাবেজের মস্তিষ্ক প্রদর্শন করা হয় দ্যা সায়েন্স মিউজিয়ামে (লন্ডন)
অ্যাডা লাভলেস
অগাস্টা অ্যাডা বা লাভলেসের কাউন্টেস (জন্ম: ডিসেম্বর ১০, ১৮১৫ - মৃত্যু: নভেম্বর ২৭, ১৮৫২) কে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ধারণার একজন প্রবর্তক মনে করা হয়। তিনি চার্লস ব্যাবেজের অ্যানালাইটিক এঞ্জিনের একটি বর্ণনা লেখেন।
পুরো নাম তাঁর অ্যাডা অগাস্টা কিং, আর ডাকা হতো কাউন্টেস অফ লাভলেস
বা শুধুই অ্যাডা লাভলেস নামে। তাঁর জন্ম হয় লন্ডনের সম্ভ্রান্ত পরিবারে
কবি লর্ড বায়রনের
কন্যা এবং একমাত্র সন্তান হিসেবে। অ্যাডা মাত্র ৩৬ বছর বেঁচে ছিলেন। ১৮৫২
সালের ২৭ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়, জরায়ুর ক্যান্সার এবং অতিরিক্ত
রক্তক্ষরণে।
স্যার চার্লস উইলিয়াম ব্যাবেজ যখন তার ডিফারেন্স মেশিন বা এনালিটিক্যাল এঞ্জিন
নামক কম্পিউটার আবিষ্কারের নেশায় মত্ত, তখন অ্যাডা তার গণিতবিষয়ক
বিশ্লষণী ক্ষমতার দ্বারা বুঝতে পেরেছিলেন এই কম্পিউটারগুলোর নাম্বার
ক্রাঞ্চিং এর অমিত সম্ভাবনা সম্পর্কে । সে চার্লস ব্যাবেজ তাই লিখে গেছেন
তাঁর Decline of Science in England এই বইয়ে। আর এমন একটা সময়ে এই
অসামান্যা নারী চার্লস ব্যাবেজকে যেসব সম্ভাবনার কথা জানান তা তার কাজকে
আরো বেগবান করেছিল। অ্যাডা অগাস্টা’কে এখন বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার
প্রোগ্রামার ধরা হয়।
বায়রনের সৎ-বোন অগাস্টা লেই
এর নামে মেয়ের নাম রাখা হয়, আর বায়রন তাকে অ্যাডা নাম দেন। মাত্র একমাস
যখন অ্যাডা’র বয়স তখন থেকে তার মা অ্যানাবেলা তাকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান।
ছোট থেকেই অ্যাডা কিছুটা অসুস্থ্তায় ভূগছিলেন, প্রচণ্ড মাথাব্যথা
হতো এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা হতো। ১৮২৪ সালে তাঁর বাবা মারা যান, যদিও তিনি
তার দায় বহন করতেন না। ১৮২৯ থেকে তিনি হাম এবং পক্ষাঘাতগ্রস্ততায়
ভূগছিলেন। কিন্তু ক্র্যাচে ভর দিয়ে হলেও শিক্ষা চালিয়ে গিয়েছেন। ১৮৩২ এ
যখন তাঁর বয়স ১৭ তখন তার বিশেষ গাণিতিক প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। তাঁর
ছেলেবেলা থেকেই মা তাঁকে গণিতে দক্ষ করে তুলতে চাইতেন বাবার প্রভাব যাতে
কোনোভাবেই মেয়ের মধ্যে প্রতিফলিত না হয় এই ভেবে। ১৮৪১ সালের অ্যাডা
জানতেনই না লর্ড বায়রন তাঁর বাবা। বাসায় গৃহশিক্ষকেরা বিভিন্ন বিষয়ে
শিক্ষা দিতেন তাঁকে। গণিতজ্ঞ ও যুক্তিবিদ ডি-মরগ্যান তাঁর শিক্ষক ছিলেন!।
স্যার চার্লস ডিকেন্স, স্যার চার্লস হুইটস্টোন এবং বিজ্ঞানি মাইকেল
ফ্যারাডে’র সাথেও তাঁর জানাশোনা ছিল। ১৮৩৩ সালের ৫ জুন তাঁর সাথে পরিচয়
হয় বিশ্ববিখ্যাত স্যার চার্লস ব্যাবেজের সঙ্গে।
চার্লস ব্যাবেজের সঙ্গে তাঁর বেশ ঘনিষ্ঠ এবং রোম্যান্টিক সম্পর্কও
গড়ে ওঠে। ব্যাবেজ অ্যাডার অসাধারণ ধীশক্তি, সাবলিল লেখনী এবং প্রতিভায়
মুগ্ধ ছিলেন। ব্যাবেজ অ্যাডা সম্পর্কে নিজের লেখায় অ্যাডাকে অাখ্যা
দিয়েছেন।
চার্লস ব্যাবেজ, যিনি তাঁর সময়ের লোকদের কাছে অনেকটা পাগল হিসেবেই
পরিচিত ছিলেন, তাঁর নতুন ধ্যান ধারণাকে মাত্র গুটিকয়েক যে ক’জন বুঝতে
পেরেছিলেন তন্মধ্যে অ্যাডা অগ্রগণ্য। যদিও ইতিহাসবেত্তাদের গলদঘর্ম হতে
হয়, অ্যাডা কতোটা প্রভাব বিস্তার করেছিলেন ব্যাবেজের উদ্ভাবনী কাজে তা
খুঁজে পেতে। কেননা, ব্যাবেজ কারো প্রতি কৃতজ্ঞতা সচেতনভাবে স্বীকার করেননি।
লেডি অ্যানি ব্লান্ট ছিলেন, তাঁর কন্যা যিনি মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণ করেন এবং
সেখানে উন্নত প্রজাতির ঘোড়ার সংকর ঘটান। তাঁকে মর্যাদা দিতে আমেরিকার
প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রণিত প্রোগ্রামিং ভাষার নামও রাখা হয় অ্যাডা।
কনসিভিং অ্যাডা নামে তাকেঁ নিয়ে একটি চলচিত্র নির্মিত হয়েছে। মাইক্রোসফটের প্রোডাক্ট অথেনটিসিটি হলোগ্রামে তাঁর ছবিও আছে।
কম্পিউটিং এবং প্রোগ্রামিং এ বিশেষ অবদানের কারণে ২৪ মার্চকে অ্যাডা লাভলেস দিবস হিসেবে বিশ্বব্যাপী উদযাপন করা হয়ে থাকে।
জন ভন নিউম্যানজন ভন নিউম্যান (ইংরেজি: John von Neumann জন্ ভ়ন্ নিউমান্, হাঙ্গেরীয়: Margittai Neumann János Lajos মর্গিত্তই ন্যাউমান্ য়ানোশ্ লয়োশ্) (২৮শে ডিসেম্বর, ১৯০৩ - ৮ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৭) একজন হাঙ্গেরীয় বংশোদ্ভুত মার্কিন গণিতবিদ যিনি সেটতত্ত্ব, জ্যামিতি, প্রবাহী গতিবিদ্যা, অর্থনীতি, যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রামিং, কম্পিউটার বিজ্ঞান, পরিসংখ্যান সহ আরো অনেক ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। নিউম্যান কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় অপারেটর তত্ত্ব ব্যবহারের পথিকৃৎ।জীবনভন নিউম্যান হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ব্যাংকের উকিল ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই ভন নিউম্যান ছিলেন অসাধারণ প্রতিভাবান। ৬ বছর বয়সে তিনি ৮-অঙ্কের সংখ্যা মনে মনে ভাগ করতে পারতেন এবং বাবার সাথে প্রাচীন গ্রিকে কথা বলতে পারতেন।তিনি ৮ বছর বয়সেই ৪৪ খন্ডের বিশ্বের ইতিহাস পড়া শেষ করে ফেলেন। ১৯২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হবার আগে ভন নিউম্যান মাইকেল ফেকেটের সাথে মিলে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। হেরমান ভাইল ও এরহার্ড শ্মিট-এর কাজ তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। তিনি মাত্র ২২ বছর বয়সে গণিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বার্লিন ও হামবুর্গে শিক্ষকতা করেন। ১৯৩০ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান ও ১৯৩৩ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ অ্যাডভান্সড স্টাডিজ-এ অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ১৯৫৪ সালে তিনি মার্কিন অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের সদস্য নিযুক্ত হন। ভন নিউম্যান হাড়ের ক্যান্সারে অস্বাভাবিক যন্ত্রণায় ভুগে মারা যান। ধারণা করা হয় মার্কিন পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পরীক্ষার সময় তেজস্ক্রিয় বিকিরণে তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত হন। তিনি প্রায় ১৫০টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। এর মধ্যে ৬০টি বিশুদ্ধ গণিত, ২০টি পদার্থবিজ্ঞান ও ৬০টি ফলিত গণিতের ওপর লেখা। মৃত্যুর আগে তিনি মানুষের মস্তিষ্কের গঠনের ওপর একটি তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করছিলেন। গণিতে অবদানভন নিউম্যান প্রথমে সেট তত্ত্ব, বাস্তব চলকের ফাংশনসমূহের তত্ত্ব এবং গণিতের ভিত্তি-র ওপর আগ্রহী ছিলেন। তিনি সেট তত্ত্বের স্বতঃসিদ্ধায়নে (Axiomatization) অবদান রাখেন। একই সাথে তিনি কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের গাণিতিক ভিত্তির ওপরেও আগ্রহী ছিলেন। কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করতে গিয়েই তিনি হিলবার্ট জগতসমূহ অধ্যয়ন করেন এবং এগুলোর রিং অপারেটর সংক্রান্ত তত্ত্বের মৌলিক ফলাফলগুলো বের করেন। রিং অপারেটরের তত্ত্ব আরো ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি অবিচ্ছিন্ন জ্যামিতির ধারণা উপস্থাপন করেন। এছাড়া তিনি গ্রুপসমূহের প্রায় পর্যায়বৃত্ত ফাংশনসমূহের তত্ত্ব দেন এবং কমপ্যাক্ট গ্রুপ সংক্রান্ত হিলবার্টের ৫ম সমস্যার সমাধান করেন। কর্মজীবনের পরবর্তী পর্যায়ে তিনি ক্রীড়া তত্ত্ব (Game Theory) ও কম্পিউটার নকশাকরণে (Computer design) অবদান রাখেন। আধুনিক কম্পিউটারের মূল স্থাপত্যকে তাঁর নামানুসারে ভন নিউম্যান স্থাপত্য বা Von neumann architecture বলা হয়ে থাকে।
স্টিভ জবসস্টিভ জবস (পুরোনাম: স্টিভেন পল জবস) (ইংরেজি: Steven Paul "Steve" Jobs) (জন্ম ফেব্রুয়ারি ২৪, ১৯৫৫, মৃত্যু ৫ অক্টোবর ২০১১)যুক্তরাষ্ট্রের একজন উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবক। তাকে পার্সোনাল কম্পিউটার বিপ্লবের পথিকৃৎ বলা হয়। বিল গেটস আর ওয়াল্ট ডিজনির নাম বিবেচনায় রেখে বলা যায় বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রগতিশীল,প্রভাবশালি, প্রতিভাবান আর সফল প্রযুক্তিক ভাবনার অধিকারী ছিলেন স্টিভ জবস | তিনি স্টিভ ওজনিয়াক এবং রোনাল্ড ওয়েন -এর সাথে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে "অ্যাপল কম্পিউটার" প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি অ্যাপল ইনকর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি "পিক্সার এ্যানিমেশন স্টুডিওস"-এরও প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ১৯৮৫ সালে অ্যাপল ইনকর্পোরেশনের "বোর্ড অব ডিরেক্টর্সের" সদস্যদের সাথে বিরোধে জড়িয়ে তিনি অ্যাপল ইনকর্পোরেশনের থেকে পদত্যাগ করেন এবং নেক্সট কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৬ সালে অ্যাপল কম্পিউটার নেক্সট কম্পিউটারকে কিনে নিলে তিনি অ্যাপলে ফিরে আসেন। তিনি ১৯৯৫ সালে টয় স্টোরি নামের অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন।জীবনবৃত্তান্তজবস জন্মেছিলেন সান ফ্রান্সিস্কোতে এবং পরে পল ও ক্লারা জবস তাকে দত্তক হিসাবে গ্রহণ করেন এবং তাকে নামকরণ করা হয় স্টিভেন পল জবস। কিন্তু তার প্রকৃত পিতা-মাতা ছিলেন জোয়ান ক্যারোল এবং আব্দুল্লাহ ফাতাহ জান্দালি (সিরিয়া থেকে স্নাতকোত্তর ছাত্র ছিলেন।পরবর্তীতে রাস্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েছিলেন)। যারা পরবর্তীতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন এবং তাদের ঘরে জবস-এর বোন সাহিত্যিক মোনা সিম্পসন জন্মান।জবস কুপারটিনো জুনিয়র হাই স্কুলে এবং হোমস্টিড হাই স্কুলে গিয়েছিলেন। তিনি প্রায়ই হিউলেট-প্যাকার্ড কোম্পানির লেকচারগুলোতে অংশগ্রহণ করতেন। যেখানে পরবর্তীতে তিনি গ্রীষ্মকালীন কর্মচারী হিসাবে স্টিভ ওজনিয়াকের সাথে কাজ করেন। ১৯৭২ থ্রিস্টাব্দে তিনি হাই স্কুল শেষ করেন এবং রীড কলেজ়ে ভর্তি হন। যদিও তিনি পরবর্তীতে কলেজ ছেড়ে দেন তার পরেও তিনি ক্যালিগ্রাফীসহ আরো কিছু ক্লাসে যোগদান করেছিলেন। এই সম্পর্কে তার বক্তব্য ছিল "যদি আমি ওই কোর্সে না যেতাম তবে ম্যাকের কখনোই বিভিন্ন টাইপফেস বা সামঞ্জস্যপূর্ণ ফন্টগুলো থাকতো না।" ১৯৭৪ সালে জবস ক্যালির্ফোনিয়াতে পুনরায় চলে আসেন। এ সময় তিনি নিয়মিত ওজনিয়াকের সাথে হোমব্রিউ কম্পিউটার ক্লাবের সভাগুলোতে উপস্থিত থাকেন। তিনি ভিডিও গেমস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আটারিতে টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি এসময় মূলত ভারতে যাবার জন্য অর্থ জমানোর চেষ্টা করছিলেন। জবস ভারতে নিম কারোলি বাবার কাইনিচি আশ্রমে তার বন্ধু ড্যানিয়েল কটকের সাথে ভ্রমন করেন। আধ্যত্মিক জ্ঞান অর্জনের জন্য তিনি ভারতে আসেন ও বৌদ্ধধর্মে ধর্মান্তরিত হন। প্রারম্ভিক কর্মজীবনভারত থেকে ফেরার পর জবসের নতুন আবির্ভাব ঘটে। তার মস্তক মুন্ডিত ছিল এবং তিনি ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। এছাড়া তিনি বৌদ্ধধর্মের অনুসারি হয়ে ওঠেন। এরপর জবস অ্যাটারিতে ফিরে আসেন এবং আর্কেড ভিডিও গেম ব্রেকআউটের জন্য সার্কিট বোর্ড তৈরির কাছে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। প্রত্যেক চিপের জন্য $১০০ দেওয়ার প্রস্তাব দেয় অ্যাটারি। সার্কিট বোর্ড ডিজাইনে জবসের একটু বিশেষ জ্ঞান ছিল এবং তিনি ওজনিয়াকের সাথ সমানভাবে ফি ভাগ করে নেওয়ার চুক্তি করেন, যদি ওজনিয়াক চিপের সংখ্যা কমাতে পারেন। অ্যাটারি ইঞ্জিনিয়ারদের বিস্মিত করে, ওজনিয়াক চিপের সংখ্যা ৫০-এ নামিয়ে আনেন। ডিজাইন এতটাই দূর্ভেদ্য ছিল যে অ্যাসেম্বলি লাইন নকল করা প্রায় অসম্ভব ছিল। ওজনিয়াকের কাছে থেকে জানা যায় যে অ্যাটারি তাদেরকে মাত্র $৭০০ দিয়েছিল (প্রস্তাবিত $৫,০০০ এর পরিবর্তে), এতে ওজনিয়াকের অংশ দাড়ায় $৩৫০। অবশ্য, ওজনিয়াক ১০ বছর পর আসল বোনাসের পরিমাণ জানতে পারেন। তবে তিনি বলেন যে যদি জবস তাকে এ সম্পর্কে জানাত এবং তার টাকাগুলোর প্রযোজনীয়তা সম্পর্কে বলত তাহলে তিনি তা তাকে দিয়ে দিতেন। টেলিফোন নেটওয়ার্ককে নিপূনভাবে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় টোন উত্পন্ন করতে, ওজনিয়াক একটি কম খরচের “ব্লু বক্স” তৈরি করেন। এতে দীর্ঘ দূরত্বের টেলিফোন কল বিনামূল্যে করা যেত। জবস সিদ্ধান্ত নেন যে তারা এটি বিক্রয় করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এই অবৈধ ব্লু বক্সের চোরাগোপ্তা বাণিজ্য ভালই চলে এবং এটি জবসের মনে বীজ বুনে দেয় যে ইলেকট্রনিক্স মজাদার এবং লাভজনক হতে পারে। ১৯৯৪ সালে একটি সাক্ষাত্কারে, জবস বলেন যে ব্লু বক্স কিভাবে তৈরি করতে হয় তা বুঝে উঠতে তাদের ছয় মাস সময় লেগেছিল। তিনি বলেন যে যদি ব্লু বক্সগুলো তৈরি না হত, তাহলে হয়ত অ্যাপলও থাকত না। তিনি আরও বলেন যে এটি তাদেরকে দেখিয়েছিল যে তা বড় কোম্পানিগুলোকে হারিয়ে দিতে পারে। ১৯৭৫ সালে, জবস ওজনিয়াকের সাথে হোমব্রিউ কম্পিউটার ক্লাবের সভায় নিয়মিত উপস্থিত হতে শুরু করেন। তিনি এডুইন এইচ. ল্যান্ডের ব্যাপক প্রশংসা করেন, যিনি ইন্সট্যান্ট ফটোগ্রাফির উদ্ভাবক এবং পোলারইড কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৭৬ সালে, জবস এবং ওজনিয়াক নিজেদের ব্যবসা শুরু করেন। তারা তাদের কোম্পানির নাম দেন “অ্যাপল কম্পিউটার কোম্পানি”। প্রথম দিকে সার্কিট বোর্ড বিক্রয়ের মাধ্যমে তারা এই কোম্পানি চালু করেন। অ্যাপল প্রতিষ্ঠা১৯৭৬ সালে ওজনিয়াক একক প্রচেষ্টায় অ্যাপল ১ কম্পিউটার উদ্ভাবন করেন। ওজনিয়াক কম্পিউটারটি জবসকে দেখালে, জবস তা বিক্রয় করার পরামর্শ দেন। তখন তারা এটিকে বিক্রয়ের জন্য রোনাল্ড ওয়েনকে সাথে নিয়ে জবসের গ্যারেজে অ্যাপল কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। ওয়েন অল্প কিছু দিন ছিলেন। অতঃপর তিনি জবস এবং ওজনিয়াককে ছেড়ে চলে যান। অবশ্য, তিনিও ছিলেন অ্যাপলের প্রাথমিক সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ইন্টেলের তত্কালীন অর্ধ-অবসরপ্রাপ্ত পণ্য বিপণন ব্যবস্থাপক মাইক মার্ককুলা তাদেরকে অর্থ সহায়তা প্রদান করেন।
১৯৭৮ সালে, অ্যাপল মাইক স্কটকে প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়। ১৯৮৩ সালে, জবস পেপসি-কোলার জন স্কালীকে অ্যাপলের প্রধান নিবাহী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের জন্য প্রলুব্ধ করেন। জবস তাকে জিজ্ঞাসা করেন, “তুমি কি তোমার জীবনের বাকিটা সময় চিনির পানীয় বিক্রয় করে কাটাতে চাও, নাকি আমার সাথে এসে বিশ্বকে বদলে দিতে চাও?”
১৯৮০’র দশকের প্রথম দিকে, জবস তাদের একজন ছিলেন যারা জেরক্স পার্কের মাউস নিয়ন্ত্রিত গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেসের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দেখছিলেন, যা জবসকে অ্যাপল লিসা উদ্ভাবনে পরিচালিত করে। এক বছর পর, অ্যাপলের কর্মচারী জেফ রাস্কিন ম্যাকিন্টশ উদ্ভাবন করেন। পরের বছর, অ্যাপল “১৯৮৪” শিরোনামে একটি সুপার বোল টেলিভিশন বিজ্ঞাপন প্রচার করে। ১৯৮৪ সালের ২৪ জানুয়ারি, অ্যাপলের অংশীদারদের বার্ষিক সভায় জবস ব্যাপকভাবে উত্সাহী দর্শকদের সামনে ম্যাকিন্টশ উন্মোচন করেন। জবস একজন প্ররোচনামূলক এবং সহজাত দক্ষতা সম্পন্ন পরিচালক হওয়া সত্ত্বেও, সে সময়ের তার কিছু কর্মচারী তাকে মেজাজী হিসেবে দেখতেন। বাজারে সুবিধা করতে না পারায় জবসের সাথে স্কালীর কাজের সম্পর্কে অবনতি ঘটে, যা তাদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পরিণত হয়। জবস মধ্যরাতেও সভা চালিয়ে যান, লম্বা ফ্যাক্স পাঠান এবং সকাল ৭টায় নতুন সভা আহবান করেন। স্কালী জানতে পারেন যে জবস পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের দ্বারা একটি অভ্যত্থান সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন এবং মে ২৪, ১৯৮৪ তারিখে, সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি পরিচালনা পরিষধদের সভা আহবান করেন। অ্যাপলের পরিচালনা পরিষদ স্কালীর পক্ষ নেয় এবং জবসকে ম্যাকিন্টশ বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ফেলা দেওয়া হয়। জবস ধীরে ধীরে কাজে আসা বন্ধ করে দেন। মহাকাশচারী হিসেবে স্পেস শাটলে ওড়ার ব্যর্থ প্রয়াস এবং সোভিয়েত ইউনিয়নে একটি নতুন কম্পিউটার কোম্পানি চালু করার কথা বিবেচনা করে, তিনি অ্যাপল থেকে পদত্যাগ করেন। ২০০৫ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় তিনি বলেন যে অ্যাপল থেকে বহিষ্কারের ঐ ঘটনাটি ছিল তার জীবনের শ্রেষ্ঠ ঘটনা। তিনি বলেন, “সফল হওয়ার ভার, নতুন করে শুরু করার আলোয় কেটে গিয়েছিল, সবকিছু সম্পর্কে কম নিশ্চিত ছিলাম। এটি আমাকে আমার জীবনের সবচেয়ে সৃজনশীল আংশে প্রবেশ করতে সহায়তা করে।” তিনি আরও বলেন, “আমি মোটামুটি নিশ্চিত এর কিছুই ঘটত না যদি না আমাকে অ্যাপল থেকে বহিষ্কার করা হত। এটি ছিল ভয়াবহ ওষুধের মত, তবে আমি মনে করি রোগীর এটি প্রয়োজন ছিল।” সম্পদজবস অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী হিসেবে বছরে মাত্র ১ মার্কিন ডলার বেতন গ্রহণ করতেন। অবশ্য তার কাছে অ্যাপলের ৫.৪২৬ মিলিয়ন শেয়ার ছিল, যার মূল্য ২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়াও ছিল ডিজনির ১৩৮ মিলিয়ন শেয়ার, যার মূল্য ৪.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জবস ঠাট্টস্বরূপ বলেন যে অ্যাপল থেকে তিনি বছরে যে ১ মার্কিন ডলার পান, তার ৫০ সেন্ট পান বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য এবং বাঁকি ৫০ সেন্ট পান নিজের কাজের জন্য। ২০১০ সালে ফোর্বসের হিসাব অনুসারে, তার সম্পত্তির পরিমাণ ৮.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা তাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম ধনী ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।মৃত্যুজবস অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে ভুগে ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন